ভালবাসার সমাধি
সাইফুল (অন্তরীক্ষ)
———————————————————————————–
চোখের সামনে সূর্যটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডোবে গেল তা দেখে প্রিয় ভাবছে, যদি ঠিক এই মুহূর্তে কবি জীবনানন্দ দাশ থাকত তাহলে নিশ্চিত এই সুন্দর, মনমুগ্ধকর পাহারী সূর্যাস্ত নিয়ে একটি প্রেমের কবিতা লিখেফেলতেন। প্রিয় এই পাহারের চূড়ায় প্রথমবার গিয়েছে। এরূপ ন্যাচারাল বিউটি প্রিয় আর আগে কখনো দেখেনি। প্রিয়র মনে আবারো ভাবনা জন্মাতে লাগল, তা হলো তার হৃদরের মানবীকে নিয়ে। প্রিয় ভাবছে তার হৃদয়ে আঁকা সেই মেয়েটির কথা। ভাবছে যদি সে এখন থাকতো তাহলে এই আকাশ এই বাতাশ এবং এই নির্জন সুন্দর সন্ধ্যার রাজা হয়তো আমি হতাম, আর রাণী হতো সেই মেয়েটি যাকে প্রিয় একেঁছে কল্পনায় শুধু ভালবাসার রঙ দিয়ে এবং রেখেছে হৃদয়ের মধ্যক্ষানে। সেই মেয়েটি আর কেও নয় শুধুই “সাথী”।
প্রিয় তার প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটাবের করল আপাকে ফোন দেয়ার জন্য। কারন বাসায় ফিরতে কিছুটা রাত হবে। প্রিয় সেখানে একা যায়নি, সেখানে গিয়েছি তার প্রাণের দুই বন্ধু সোহেল আর রুবেল।
হ্যালো আপা, আমার বাসায় ফিরতে কিছুটা রাত হবে। আপনি আমার জন্য চিন্তা করবেন না।
– তুই কোথায়?
-আপা আমি সোহেল আর রুবেলের সাথে।
-ও আচ্ছা, বেশি রাত করিস না।
আপার সাথে কথা শেষ করে আমি চারদিক ঘোরে ঘোরে দেখছি। মনকাড়া বাতাশ আমার গায়ে এসে খেলা করছে। আমার কাছে মনে হলো, হাতটা উপরে তুললেই আকাশটি ছোয়া যাবে। আবার সাথীর কথা মনে পরেগেল। সে যদি এই নির্জন সন্ধ্যায় বসে গান গাইত আর আমি তার কোলে মাথা রেখে গান শোনতাম।
মনোরম স্নীগ্ধ সন্ধ্যায়
বসিয়া ভাবছি তোমায়
পাখির কলোহল, মনের গভীরতল
ছুটে যায় তোমার সীমানাস্থল।
তুমি পাশে নেই, নেই তোমার মন
কিভাবে হবে আমার কবিতার সমাপন।
প্রতিক্ষা এটাই আমার, এই সন্ধ্যায়
ভালো আমি বেসে যাব আজীবন তোমায়।
সাক্ষী থাকবে আকাশ বাতাস
সাক্ষী থাকবে সকাল সন্ধ্যা
মন দিয়েছি আমি তোমায়
এটাই সত্যি কথা।
বিশ্বজনের মধ্য থেকে আনবো খুজেঁ তোমায়
জানিয়ে দিব বিশ্বটাকে ভালোবাসার মর্ম সেথায়।
মনের মানুষ পাশে হত যদি, এই সন্ধ্যায়
ভরে যেত আমার মনটি, তোমার নরম ছোয়ায়।
হঠাৎ সোহেলের ডাক শোনা যাচ্ছে, প্রিয়, এই প্রিয়, কী ভাবছিস?
সাথীর কথা দোস্ত। পাশে থেকে রুবেল বলে উঠল “আচ্ছা প্রিয়, তুই সাথীকে কতটুকু ভালবাসিস?”
প্রিয় বলছে, আমি সাথীকে ততটাই ভালবাসি যতটা ভালবাসা এই পৃথিবীতে আছে। আর এই পৃথিবীতে ভালবাসা যদি এক তিল পরিমানের থেকে, তাইলে ছোট এই তিলের সবটা সীমানা জুরে সাথীর জন্য আমার ভালবাসা।
ঘড়ির কাঁটা প্রায় ৮ টার দিকে, আমরা তিন জন একসাথে একটা গাছের নিছে বসলাম। তখন রুবেল বলল, শোন প্রিয়, তুই সাথীকে যতটা গভীর থেকে ভালবাসিস, সে কিন্তু তোকে ততটা ভালবাসে না। সে আর একটা ছেলেকে ভালবাসে।
কিন্তু, প্রিয় তা বিশ্বাস করে না।
প্রিয় বলে, না না তা অসম্ভব। কারণ সাথী আমার বুকে মাথা রেখে বলেছে সে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালবাসেনি এবং আর কাউকে ভালবাসবতে পারবে না, শুধু আমাকেই ভালবাসবে ও ভালবাসে। আরো বলেছে আমাকে ছাড়া সে বাচঁবে না। আমিই মনের তার একমাত্র মানব।
আমিও তাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালবেসে ফেলেছি। সে আমার প্রথম ভালবাসা। আর প্রথম ভালবাসা কেউ কোনদিন ভুলতে পারে না। সত্যিই, আমি আমার সাথীকে ছাড়া থাকতে পারব না।
আমি তোদের সামনে, এই বান্দরবান নীলাচলের আকাশ, বাতাশ, পাহাড় এবং এই সুন্দর প্রকৃতিকে স্বাক্ষী রেখে বলতে চাই, আমি সাথীকে ভালবাসি, সাথীকেই ভালোবাসব এবং সাথীই আমার প্রথম ভালবাসা; আমি সাথীকে ভুলতে পারব না।
সাথে সাথে সোহেল এবং রুবেল বলে উঠল, দোস্ত প্রিয় তুই সাথীকে ভুলেযা। সাথী আর তোকে ভালবাসে না। আর সবচেয়ে বড় সত্য হলো, আমরা দুইজন আশিক স্যারের হিসাববিজ্ঞান প্রাইভেট থেকে নীলাচলে নিয়ে এসেছি পরিকল্পনা করেই, আর এই পরিকল্পনাটি হল, তোকে সব কিছু খোলে বলার জন্য। তোকে বলব ছলনাময়ী সাথীর কথা। যাকে তোই অন্ধের মত ভালবাসিস।
রুবেল বলল, দেখ প্রিয়, তোরজন্য আমরা সব করতে পারি। তাইবলে তোকে ধ্বংশের দিকে ছেড়ে দিতে পারি না। সাথী যদি তোকে সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে আমরা তোকে সাহায্য করতাম। কিন্তু সাথীতো তোকে ভালবাসে নারে দোস্ত। সে ভালোবাসে অন্য একটা ছেলেকে। একটা ছলনাময়ী মেয়ের জন্য তুই কষ্ট পাবি এটা আমরা সহ্য করতে পারব না। তুই সাথীকে অন্ধের মত ভালবাসস বলে তার ছলনা তোর চোখে ধরা পরে না। গত শনিবার যখন তুই সাথীর সাথে দেখে করতে গিয়েছিলি, তখন সে তোর ডাকে সাড়া দেয় নি। সেটাও আমরা দেখেছি। আর ঐ দিন রাতে তুই সিগারেট খেয়েছিস, তাও আমরা বুঝতে পেরেছি।
যে ছেলে কখনো সিগারেটের ধোঁয়া পছন্দ করে না, সে ছেলে সিগারেট টেনেছে তা আমরা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
প্রিয় বন্ধুদের কথাগুলো শোনার পরে, কিছুক্ষন চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, কী করব তোরা বল আমাকে, আমি যে অন্ধের মতো সাথীকে ভালবাসি। তার সেদিনের প্রতিঙ্ঘা, সেদিনের দেওয়া আশা সেসবই কী মিথ্যা!
না না, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আর কখনো বিশ্বাস করতে পারবও না।
আমি সাথীর সাথে কথা বলতে চাই।
ঠিক আছে কথা বলিস। কিন্তু তোর কিছু হোক তা আমরা চাই না। ঐ মেয়ের জন্য আমরা আমাদের বন্ধুকে হারাতে পারবনা। তারপরে প্রিয়সহ সবাই নীলাচল থেকে বান্দরবান শহরে যার যার বাসাইয় চলে আসল। তখন রাত ১০ টা।
পরের দিন রুবেল এবং সোহেল কলেজে এসে দেখে প্রিয় কলেজে আসে নাই। কলেজ শেষ করে তারা দুইজন প্রিয়র বাসায় গেল। প্রিয় তার বড় আপার সাথে থাকে। আপার বাসায় থেকেই সে লেখাপড়া করে। প্রিয়র দুই বন্ধু, প্রিয়র আপাকে বললঃ আপা প্রিয় কোথায়?
প্রিয়তো কলেজে। তোমাদের সাথে দেখা হউনি?
না।
তাহলে কোথায় গেছে?
আপা আমরা দেখতেছে, আপনি চিন্তা করবেন না। এখন আমরা আসি।
ঠিক আছে এসো, আবার আসবা।
তারা দুইজন যার যার বাড়ি চলে গেল। বিকালে প্রিয়র সাথে দেখা হল সোহেলের। সে বলল, কিরে প্রিয় আজকে কলেজে আসিসনি কেন?
প্রিয় বললঃ ভালোলাগছিল না তাই। আচ্ছা সোহেল আমাকে তুই বলতো, সাথীর সাথে কীভাবে দেখা করা যায়?
সাথীতো তোর সাথে দেখা করবে না। আর সে তোর সাথে দেখা করার প্রয়োজন মনে করে না।
কিন্তু সাথীর সাথে আমার অনেক কিছু বলার ছিল।
একটা উপায় আছে দোস্ত।
প্লিজ দোস্ত তাড়াতাড়ি বল আমাকে, কী উপায়?
সাথীর বান্ধবী বাবলীর মাধ্যমে তুই কিছু লিখে পাঠাতে পারিস।
সোহেলকে বুকে জরিয়ে বলল, ভাল থাক দোস্ত। এখন যাই বলে, প্রিয় চলে গেল।
এরই মধ্যে প্রিয় সাথীর কাছে বাবলীর মাধ্যমে প্রিয় বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছে কিন্তু একটিরও জবাব সে পায়নি। সাথী বাবলীকে বলে দিয়েছে, প্রিয় যেন তাকে ভুলে যায়।
প্রিয় শেষবারের মতো লিখতে বসল, সাথীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি।
ওগো আমার হৃদয়হীনা “প্রিয়া সাথী”,
লেখার শুরুতেই তোমাকে জানাই আমার ব্যথা ভরা বেদনার্থ হৃদয়ের অফুরন্ত ভালবাসাসহ একগুচ্ছ হাসনাহেনার শুভেচ্ছা। আশা করি তুমি তোমার প্রথম প্রেমিক “প্রিয়” কে ভুলে দ্বিতীয় প্রেমিককে নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে দিন অববাহিত করছো। দুইদিন পরে হয়তো শুনবো তুমি তোমার দ্বিতীয় প্রেমিককে ভুলে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রেমিক তৈরী করে ফেলেছো। কারন তোমার মত ছলনাময়ী বিশ্বাস ঘাতক, চরিত্রহীনা মেয়ের কাছে দিনের পর দিন নতুন নতুন প্রেমিক তৈরী করে আমার মতো ছেলেদের জীবন ধ্বংস করা কোন ঘটনাই নয়। আমার ভাবতে অবাগ লাগছে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, কী করে তুমি এত নিষ্ঠুর হয়ে গেলে! ভাল যদি নাই বাসবে তাহলে কেন তোমার বুকে ঠাঁই দিয়েছিলে আর কেনই–বা আমার হৃদয় সিংহাসনে আসন পেতে বসেছিলে?
কী দোষ ছিল আমার? আজ আমি বুঝতে পেরেছি যে এতদিন তুমি আমার মাটির মত নরম মনটাকে শুধু ফাঁকি দিয়ে এসেছো। “সাথী” শিশু থেকে কৈশোর; কৈশোর থেকে প্রথম যৌবন পর্যন্ত আমি শুধু তোমাকেই ভালবেসে আসছি। তুমি আমার প্রথম প্রেম প্রথম ভালবাসা। তুমিই প্রথম আমার কোমল হৃদয়ে ভালবাসার প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত্ব করেছো আমার মনের বাগানকে। আজ কেন সেই প্রদীপ চিরদিনের মত নিস্তধ্ব করতে চাও? তুমিই তো সেদিন তোমাকে ভুলতে বারণ করেছিলে আমাকে। তুমি নাকি বাচঁবে না আমাকে ছাড়া। আর আজ! আজ নাকি তুমি অন্য একজনকে ভালবাসো, আজ তুমি নতুন ভাবে ভালবাসতে শিখেছো, নতুন করে প্রেম করতে শিখেছো। বাহ! কী চমৎকার! কী চমৎকার তোমার বিবেক! আজ তোমার বিবেকের প্রশংসা না করে পারছি না। “সাথী” আজ তুমি যে প্রতারনা আমার সাথে করেছো, সেই প্রতারনার কালি বুকে নিয়ে আমি মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকবো আজীবন।
কবিতা………।
সাথী ভুলে যাবে তবে কেন ভালবাসলে?
মিথ্যে আশায় কেন হৃদয় নিলে?
আমি তো চাইনি প্রথম ভালবাসা তোমার!
বিষন্ন বেদনা আর অনির্বান উপহার।
তোমার কথা যখন মনে পড়ে
দুচোখে আমার অবিরাম অশ্রু ঝড়ে,
একবার এসে দেখেযাও আমায়
হৃদয় দিয়ে ভালবেসেছিলাম তোমায়।
তোমাকে নিয়ে যে চোখে স্বপ্ন ছিল আমার
আজ সে চোখে শুধু বিরহের জল আমার।
সাথী তুমি ছিলে আমার হৃদয়ের ভূমি
আজ তুমি নেই তাই সবই মরুভূমি।
হৃদয়ের কুটিরে কত যে মায়া মমতা
কখনো তুমি বুঝতে চাওনি তা।
চোখের দৃষ্টিতে আকাশ যেমন কাছে
হৃদয়ের দৃষ্টিতে ঠিক তুমি আমার পাশে।
কবে আমি সেই তোমার মধুর নামে ডাকব
জানিনা তোমায় আমি কি করে ভুলে থাকব।
নিস্তধ্ব পৃথিবীর আকাশের নীচে আমি
ভুলা যায় না অতীতের স্মৃতি শুধু তুমি
ভাবতে পারিনা কোনদিনও আমি
ছলনার পৃথিবীতে প্রতারনা করবে তুমি।
বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ঐদিনের পর থেকে অন্ধের মতো ভালবাসি। তোমার জন্য আমি যুগ যুগ অপেক্ষা করবো। কিন্তু তুমি আমাকে একা করে দিলে সাথী। অনেক একা করেদিলে আমায়। খুব খারাপ লাগছে এখন আমার।
আমি সারা জীবন তোমাকেই ভালোবাসবো। আর বাঁচার জন্য যদি আরো কয়েকটা দিন পাই তাহলে শুধু তোমাকে ভালবেসে বাচঁব, আর আমাদের ভালবাসার স্মৃতিগুলো বার বার মনে করে আমি হারিয়ে যাবো কান্নার ছায়ালোকে এবং কাটিয়ে দিব প্রাণহীন বাকীটা জীবন। আমি তোমার সুখে বাধা হয়ে দাঁড়াব না। আমি তোমার দেওয়া দুঃখ, কষ্ট, ছলনা, বেদনাকে নিয়ে বেচেঁ থাকব। তবুই আমি তোমার ভালবাসার প্রতিক্ষায় রইব, আমার হৃদয়ের দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে। তুমি যে কোন সময় অনুমতি ছাড়াই ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে।
“সাথী” তোমার একটি ধারনা সম্পূর্ন ভুল, তুমি একটি কথা মনে রাখবে যে, আমি তোমাকে কোন দিনও অভিশাপ দিতে পারব না। কারন আমি যে তোমাকে ভালবাসি। যাকে ভালবাসা যায় তাকেতো অভিশাপ দেয়া যায় না। তুমি যদি খারাপ কিছু করে থাক, তাহলে অভিশাপ হইতো সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকেই ছুটে আসবে।
আমি আশির্বাদ করি তুমি সুখে থাক আজীবন। যদিও আমি আমার অন্তর থেকে কথাটি বলতে পারছি না।
আর এই মুহূর্তে কেউ বলতেও পারবে না।
আর বিশেষ কী লিখব! শুধু এতটুকু লিখে শেষ করতে চাই যে, আমার ভালবাসা যদি এ দেশের মাটির মত খাঁটি হয়ে থাকে, আমার ভালবাসা যদি বাইবেল, কোরআন আর গীতার মত পবিত্র হয়ে থাকে তাহলে আমার দুচোখ থেকে তুমি যে কফোঁটা অশ্রু ঝড়িয়েছো ঠিক সে কফোঁটা অশ্রু একদিন তোমার চোখ থেকে অন্যকেউ ঝড়াবেই। সেদিন হয়তো আমি এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকব না।
ইতি
তোমার ছলনার শিকার
–“প্রিয়”;;;;!
চিঠিটি বাবলীর মাধ্যমে সাথীর কাছে পাঠালো প্রিয়। সাথী চিঠিটি পেয়ে পড়ল, কিন্তু তার শক্ত হৃদয়ে একটুও অনুভূত জাগেনি, সে সত্যিই ছলনাময়ী। চিঠিটা পড়ার পর সাথী একটি চিঠি লিখতে বসে।
“প্রিয়,
আমি চাইনা তুমি আমাকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখ। আমি চাই তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি এখন আরেকজনকে ভালবাসি। হ্যাঁ, আমি তোমাকে বলেছি যে আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু এখন আর ভালবাসি না। তুমি অন্য একজনকে নিয়ে সুখী হও। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ইতি “সাথী”
সাথী তার লেখা চিঠিটি বাবলীর মাধ্যমে প্রিয়র কাছে পাঠাল। প্রিয় সাথীর চিঠিটি হাতে পেয়ে খুসিতে আত্মহারা। সে ভেবেছে, তার ডাকে সাথী সাড়া দিয়েছে। এসব ভেবে প্রিয় চিঠিটি পড়লো। চিঠিটি পড়ে প্রিয় বিশ্বাস করতে পারছে না, সে চিঠিটি আবার পড়লো। চিঠিটি পরপর কয়েকবার পড়ার পরে প্রিয় এখন নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সে বলছে কী দোষ ছিল আমার সাথী তোমার কাছে, যার জন্য এভাবে কষ্ট দিলে। এতো ভালবেসেও আমি তোমাকে পাবনা। আর তুমি বলছো অন্য আরেকজনকে ভালবাসতে। অন্য আরেকজনকে ভালবেসে সুখী হতে। তা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আমি তোমাকেই ভালবাসি সাথী।
কাছের সামনে কলম আর খাতা পেয়ে প্রিয় যা মনে আসলো তা লিখতে বসল অছন্দে কবিতার ভাষায়ঃ
“আমি তোমাকেই ভালোবাসি
তোমাতেই পারিব দিতে
জীবন মরণ উৎসর্গ করে
তোমারই ভালবাসায়
শত কষ্ট পারিব সইতে
পারবনা কভু তোমাকে হারাতে।
সেই তুমি, ভালবাসার বিনিময়ে দিয়েছো ছলনা
সুখের বিনিময়ে দিয়েছো বেদনা।।
এসব ছাড়া তোমার কাছে
ছিলই–বা কী দেবার?
দুঃখ, কষ্ট হাহাকার!
জীবনে প্রথম ভালবেসেছি আমি তোমাকে
তুমি বুঝতে চাইলেনা আমাকে।
পাহাড় সমান দুঃখ নিয়ে ছলনাকে স্বাক্ষীকরে
কষ্টকে আপন করে
ভালভাসবো তোমাকে যতকাল,
সুখে থাকো তুমি চিরকাল।”
ঠিক তিন মাস পর সোহেল এর সাথে দেখা হয় প্রিয়র। কিন্তু সোহেল প্রিয়কে প্রথম দেখায় চিনতে পারছে না। চিনবেই বা কী করে। তার মাথায় বড় বড় চুল এবং গাল ভরা দাড়ি। দেখতে একেবারে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাসের মতো লাগছে। এসবের জন্য দায়ী একমাত্র সাথী নিজেই।
প্রিয়র কলেজের প্রথম হওয়া বালিকাটি প্রিয়কে প্রথম থেকেই ভালবাসতো।বালিকাটির নাম অনামিকা। প্রিয় ছাত্র হিসেবে ছিল অনেক মেধাবী। ভালবাসার কথাটি প্রিয়কে বলার সাহস হয়নি অনামিকার।এমমকি সোহেল, রুবেলকেও বলতে পারেনি অনামিকা। অনামিকার বাসা প্রিয়র আপার বাসার সাথে। প্রিয় যে সাথীকে ভালবাসে সেটা অনামিকা জানতো। তাই আরো তার ভালবাসার কথা বলার সাহস হাড়িয়ে ফেলেছে।
অনামিকার লুকানো কথাটি সোহেল জানতে পারল।সোহেল এই কথাটি রুবেলের কাছে বলছে এবং প্রিয়র বর্তমান শারিরীক অবস্তার কথাও বলেছে । তারা দুইজন মিলে প্রিয়র কাছে যাবে এবং অনামিকার কথা বলবে বলে পরিকল্পনা করেছে। তাদের ধারনা, অনামিকার ভালবাসায় প্রিয় আবার স্বাভাবিক জীননে ফিরে আসতে পারবে। এমনকি অনামিকা হল কলেজের ছাত্রীদের মধ্যে মেধা তালিকায় প্রথম, আর প্রিয় হল ছাত্রদের মধ্যে প্রথম। তাদের মধ্যে কিছুটা বন্ধুত্ত্বও আছে।
সোহেল এবং রুবেল দুইজন প্রিয়র কাছে গেল। সে তখন নিরব হয়ে পুকুর ঘাটের কাছে একটি গাছের নিচে বসে সিগারেট টানতেছে। কিন্তু তার মুখে কোন হাসি নাই, নাই কোন কথাও।
রুবেল বলল, প্রিয় তুই তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবি আমরা চাই না। শুধু আমরাই নয়। আরো একজন আছে সেও চায় না। আর সে হল, আমাদের কলেজের অনামিকা, ও তোকে প্রথম থেকেই ভালবাসে। কিন্তু সে তা বলতে পারেনি কোনদিন। সোহেল বলল, সাথী নয়, অনামিকাই তোকে সত্যিকারে ভালবাসে।
প্রিয় ধিরে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, অনামিকা কোথায়?
সোহেল বলল, সে এখন ওদের বাড়িতে।
ঠিক আছে, তোরা এখন যা, আমি অনামিকার সাথে কথা বলব।
প্রিয় রাতে অনামিকার সাথে দেখা করল। এবং বলল অনামিকা; সোহেল যা বলেছে তা কী সত্যি?
হ্যাঁ, প্রিয় তা সত্যি।
তাহলে আগে বলনি কেন? তুমি আমাকে ভালবাসো। তুমি খুব বড় ভুল করেফেলেছ অনামিকা। খুব বড় ভুল। আর তুমি জানো আমি সাথীকে খুব ভালবাসি। আর সাথীই হল আমার প্রথম ভালবাসা। আমিযে সাথীকে ভুলতে পারব না।
অনামিকা তখন বলল, প্রিয় তুমিও আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা, আমিও তোমাকে ভুলতে পারব না প্রিয়।
আমাকে ক্ষমা করেদিও অনামিকা। আমি সাথীর প্রেমের কাঙ্গাল হয়ে আছি। তা বলে প্রিয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্থানটি ত্যাগ করল। আর অনামিকা ছলছল চোখে অপলক ভাবে পিছন থেকে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে রইল।
প্রিয় সকালে বাবলীর কাছে শোনতে পারে, আগামীকাল সাথীর বাবার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর ছেলের সাথে সাথীর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলেটির নাম সোহাগ। সোহাগের সাথে সাথী নাকি গত তিনদিন ধরে জমিয়ে প্রেম করছে।
এ কথা শোনে প্রিয়র মাথায় আকাশ ভেংগে পরলো। তার কিছু করার উপায় নেই। সব উপায় সাথী বন্ধ করেদিয়েছে। তবুই প্রিয়, সাথীর মুখামুখী হল। সে সাথীকে বলল, আমি চাই তুমি সুখে থাক। আজ হয়তো তোমার সাথে আমার শেষ দেখা। আমি তোমার কাজ থেকে খুব খুব দূরে চলে যাব। কারন এ যন্ত্রনা আমি সইতে পারবনা। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে তোমার সুখ কামনা করছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে যদি তোমার মত হৃদয়হীনা ছলনাময়ীর কোন শাস্তি থাকে,তাহলে আমার কিছু করার নাই। আমি শুধু তোমার সুখ চাই। হয়তো তুমি আমাকে ভুলেগেছ আরো বেশি সুখী হবার আশায়। কিন্তু আমার থেকে বেশি ভালবাসা তোমাকে কেউ দিতে পারবে না। আর সাথী তুমি মনে রেখ, ভালবাসার সুখই প্রকৃত সুখ। তার থেকে বড় সুখ এই পৃথিবীতে নাই।
একথাগুলো বলে প্রিয় চলে এলো। কিন্তু বাড়িতে এলো তার লাশ।
প্রিয়র বাড়িতে এখন শোকের বন্যা। অনামিকা একেবারে জড়ীভূত, দৃঢ়ীভূত, মূর্ছিত। তার চোখ দিয়ে শুধু পানিই পরছে। মুখে কোন কথা নেই। প্রিয়র আপার বাসার সবাই, ভাই হারা শোকে শোকাহত।আপা খবর শোনে অচেতন হয়েপরে আছে। আপাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রিয়র লাশ দাফন দেবার পর বাড়ীফিরে সোহেল আর রুবেল দেখে অনামিকার রুম বন্ধ। তারা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে দেখে অনামিকা ফাঁসির দড়িতে ঝুলছে। সারাগ্রামে এ দুই শোকের খবর ছড়িয়ে পরেছে। সাথীও শোনতে পেরেছে দুটি মৃত্যুর খবর।কিন্তু সাথী তখন সোহাগের সাথে বিয়ের আনন্দের দিশেহারা।
প্রিয়র কবরের পাশেই অনামিকাকে দাফন দেওয়া হয়। সারাগ্রামে শোকের বণ্যার মধ্য দিয়ে ছলনাময়ী, হৃদয়হীনা সাথীর বিয়ে হয়েছে। ঐ রাতেই সাথীর বাসর রাত। সারা গ্রামে শোকের কালো ধোয়া আর অপর দিকে সাথীদের বাড়িতে বিয়ের আনন্দ। বাবলীর কাছে সাথী বলল, বাসর রাতে নাকি সোহাগ বন্ধুদের সাথে মদ খেয়ে এসে সাথীর সাথে মাতলামি করে মারধর করেছে।
সাথীর স্বামী সোহাগ, সাথীর অতীত এবং প্রিয়র সাথে ছলনার কথা কিছুই জানতো না। বিয়ের পরের দিন নিজের বাড়ি থেকে সাথী তার শুশুর বাড়ীতে গেল। জরুরি বার্তা এলো ঐ দিনই সোহাগকে এক সপ্তাহের জন্য ব্যবসায়ের কাজে দেশের বাইরে চেতে হবে। এক সপ্তাহ পর সোহাগ দেশে আসবে। দেশে আসার পর সাথী ও সোহাগের মধু–চন্দ্রিমা হবে।
বাসা থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে সোহাগের গাড়ি দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। মালবাহি ট্রাকের সাথে মুখমুখি সংঘর্ষে কাকতালিয় ভাবে গাড়ির ড্রাইবার বেঁচে যায়। কিন্তু সোহাগকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
সাথীর শশুর বাড়িতে এই খবর চলে গেছে। বাড়িতে কান্নাকাটির, সারা গ্রামে আবার শোকের কালো ধোঁয়াতে ভাড়ি হয়ে উঠেছে গ্রামের আকাশ বাতাস।
সৃষ্টিকর্তার কী অদ্ভুত খেলা। তিনি জগতের মালিক, তিনিই জানেন জগতের সব খেলার ফলাফল। কারন তিনিই সকল খেলার একমাত্র পরিচালনাকারী। প্রিয়জন হাড়িয়ে মানুষ কতকষ্টে থাকে তা হয়তো তিনি (আল্লাহ) সাথীকে বুঝাতেই সোহাগের মত ভাল মানুষকে নিয়েগেছেন আকাশের ঠিকানায়।
প্রিয় ও অনামিকার কবরের পাশেই ছলনাময়ী সাথীর স্বামী সোহাগের কবর দেওয়া হয়েছে। সারাগ্রামের মানুষ সাথীকে নিয়ে কথা বলছে। সবাই বলছে এ তিনটি জীবন ধ্বংশের জন্য দায়ী একমাত্র সাথী। তারমতো হৃদয়হীনা নারী তিন–তিনটি হৃদয়, তিন–তিনটি জীবন শিকার করেছে। সে পাপী।
সবাই বলছে, যার যার মত করে। কোথায় গেল সাথীর রূপের অহংকার! সবার কথা শোনে সাথী বুঝতে পারছে, তার জন্য প্রিয়র ভালোবাসা কতটা গভীর ছিল। কতটা অসহায়ছিল প্রিয়, কতটা কষ্টেছিল একটা মানুষ। কতটা ভালোবাসা থাকলে একটা ছেলে এতোটা কাঙ্ঘাল হতে পারে ভালবাসার কাছে।
প্রিয়র অভিশাপেই কী এমন হল, সবার মুখে মুখে এমন সন্দেহ।
এক সপ্তাহ পর, এক রাতে ঐ তিনটি কবরের সামনে সাদা কাপর পরা অল্প–বয়সী এক নারী। সে বলছে, প্রিয় তোমার সাথে ছলনার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে হবে। এ বলে সে দক্ষিন দিকে নদীর স্রোতের অনুকূলে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যেন গেল কেউ জানে না।
সোহেল আর রুবেল পরের দিন সকালে প্রিয়র কবরে গিয়ে দেখে, কবরের ঠিক মাঝখানে একটি গোলাপ আর একটি সাদাকাপরের টুকরা। সাদাকাপরের ছোট টুকরাটিতে “ভালবাসার সমাধি” শিরোনাম দিয়ে লেখা ছিল,
তোমার ভালবাসার ব্যাকুলতা, গভীরাতা আমি বুঝেও কোন মূল্যদেই নাই। জীবনে এতোটা ভালবাসা কেও বাসতে পারে, আমি জানতাম না। তোমার সাথে আমি যে কয়েকটি দিন কাটিয়েছি, কয়েকটি মূহুর্ত আমি থেকেছি তোমার সাথে তাতে তোমার ভালবাসার যে গভীরতা ছিল, তা আমি এখন বুঝতে পেরেছি। আমি তোমার বিশাল হৃদয়ের ভালবাসার কোন মূল্য দেইনি। তখন আমি বিভিন্ন ছেলেদেরকে আমার পিছনে ঘুরাতে চেয়েছিলাম, আমার কাছে তাতেই আনন্দ লাগত। আমি ভেবেছিলাম তুমিও আমার মতো বা অন্যান্য ছেলেদের মতো ক্ষনিকের আনন্দ নিতেই ভালোবাসার অভিনয় করবা। আজকে আমি ভালবাসার অভাবটা বুঝতে পেরেছি। তোমার ভালবাসার প্রতিটি বেগ আজ আমি বুঝতে পেরেছি। আজকে তোমার ভালবাসা আমার জন্য খুব দরকার ছিল। আমি তোমার ভালবাসার কাছে হেরেগেছি প্রিয়। তুমি ভালবাসাকে ভালবেসে জীবন দিয়েছ। তুমি অমর হয়ে আছো ভালবাসার কাছে। আজকে আমার জন্য তুমি আর এই পৃথিবীতে নেই, আমার জন্য কয়েকটি জীবন, কয়েকটি ভালবাসার দাফন হয়েছে। ভালোবাসাকে খুন করেছি আমি। আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমি নিজেই করব ।
প্রিয়র কবরের বামপাশে একটি বিশের শিশি পরেছিল, শিশিটিতে লেখাছিল“প্রায়শ্চিত্ত”।
লেখকের দুটি কথাঃ গল্পের প্রয়োজনে অনেকেই ভালবেসে জীবন দিয়েছে। কিন্তু ভালবাসা হল পবিত্র। ভালবেসে আত্মহত্যা করলে ভালবাসার প্রতি সম্মান করা হয় না। ভালবাসার ফলাফল হইহোক, ভালভাবে বেচেঁ থেকে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আপনি আরো বেশি ভালবাসা পাবেন। একটি মেয়ের জন্য, বা একটি ছেলের জন্য আমরা–আপনারা পৃথিবীতে আসিনি। আমাদের প্রতি আমাদের মা–বাবার, সমাজের তথা দেশের সবার কিছু অধিকার আছে। তাদের অধিকারের সবটুকুই আমাদের পরিশোধ করতে হবে। ভালবেসে বেঁচে থেকে, ভালবাসার ফলাফল যাই হোক।
লেখাটা দারুন হয়েছে
আমি লেখা প্রকাশ করতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না
দয়া করে বলবেন কি করব
দয়া করে একটু বলেন